জাতীয়
দাদা দাদীর বাসনকোসন বা তৈজসপত্র বিক্রমপুর জাদুঘরকে দান করলেন কবির ভূঁইয়া কেনেডি
শ্রীনগর পোস্ট ডেস্ক
রবিবার, ১১ ফেব্রুয়ারি, ২০২৪, ৯:৫৮ অপরাহ্ণ | 456 বার পড়া হয়েছে
স্টাফ রিপোর্টারঃ অগ্রসর বিক্রমপুর ফাউন্ডেশন এর লৌহজং উপজেলা শাখার সভাপতি, বিশিষ্ট ব্যবসায়ী মোঃ কবির ভূঁইয়া কেনেডি, তাহার দাদা দাদীর ব্যবহার করা কাঁসা এবং পিতলের বাসনকোসন বা তৈজসপত্র বিক্রমপুর জাদুঘরকে দান করলেন কবির ভূঁইয়া কেনেডি। আজ ১১ ফেব্রুয়ারি ২০২৪ শনিবার শ্রীনগর উপজেলার বালাসুর গ্রামের বিক্রমপুর জাদুঘর প্রাঙ্গণে উপস্থিত হয়ে তিনি জানান, ‘এখানে আমার দাদা দাদীর ব্যবহার করা জিনিস পত্র গুলো মা ব্যবহার করতেন এখন আর ব্যবহার হয় না কিন্তু মা সব জিনিস গুলো খুব যত্নে আগলে রেখেছিলেন তাহার শ্বশুর শাশুড়ির এই অমূল্য জিনিস। বাড়িতে না থাকায় অনেক জিনিস পত্র খোয়া গেছে আজ মা নিজের হাতে জাদুঘরে দান করে মানুষের দেখার সুযোগ করে দিলেন এবং এতদিনের ভালোবাসার জিনিস পত্র গুলো সকলের জন্য উন্মুক্ত করে দিয়ে মা খুব খুশি।’ লৌহজংয়ের ডহরী গ্রামের বাড়িতে জিনিস পত্র গুলো রক্ষিত ছিল আজ সে নিজে গাড়িতে করে এনে বিক্রমপুর জাদুঘর এ দিয়ে গেলেন। দানকৃত জিনিস পত্র গুলো হলো, পিতলের মটকা বড় ১টা, পিতলেব মটকা মাঝারি-১টা,তামার পাতিল ১টা,পিতলের চাল ধোয়ার পাতিল ১টা, পিতনের চিলনচি ১টা,কাঁসার লগন ১টা,পিতলের পানদান- ১টা,পিতলের বদনা ২টা, পিতলের জগ-১টা, তামার হুক্কা-১,পিতলের হুক্কা-১, তামার কল্কি ১টা, লোহার ইস্ত্রি-১টা এবং পিতলের হাতা/ রান্না করার চামচ বড় এবং মাঝারি সাইজের-৭টা। সর্বমোট মোট ২০টি তামা, কাঁসা এবং পিতলের সামগ্রী বিক্রমপুর জাদুঘরকে দান করেন। দান সমূহ গ্রহণের সময় উপস্থিত ছিলেন অগ্রসর বিক্রমপুর ফাউন্ডেশন লৌহজং উপজেলা শাখার কার্যকরী পরিষদের সদস্য বীর মুক্তিযোদ্ধা শাহলম বাহার, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মোঃ নজরুল ইসলাম,কার্যকরী পরিষদের সদস্য বেলায়েত হোসেন, আমি বিক্রমপুর জাদুঘর কিউরেটর নাছির উদ্দিন আহমেদ জুয়েল ও ম্যানেজার রেজাউল হক প্রমূখ। বিক্রমপুর জাদুঘর এর পক্ষ থেকে কিউরেটর নাছির উদ্দিন আহমেদ জুয়েল আন্তরিক ভাবে ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন মোঃ কবির ভূঁইয়া কেনেডি ও তাহার পরিবারের সকল সদস্যদের প্রতি। জাদুঘরটি আরো সমৃদ্ধ করার জন্য জাদুঘরের পক্ষ থেকে কিউরেট প্রাচীন তৈজসপত্র, পাথর বা অন্যান্য ধাতু/চীনা মাটি ও মাটির নির্মিত থালা, বাসন, অতীত যুগের ব্যবহার্য সামগ্রী, কৃষি যন্ত্রপাতি, পুরাতন খাট পালং, চেয়ার, টেবিল, আলমারি, পুঁথি-পত্র, বই তালপাতায় বা হাতে বানানো কাগজে হাতে লেখা প্রাচীন গ্রন্থ, নৌকা, মৃৎশিল্প, পোড়ামাটির নিদর্শন, মূর্তি, কয়েন, অলংকার, হাতির দাঁতের শিল্পকর্ম, প্রাকৃতিক সম্পদ, ধাতব শিল্পকর্ম, পুতুল, বাদ্যযন্ত্র, পোশাক, নকশিকাঁথা, কাঠের শিল্পকর্ম,পাণ্ডুলিপি ইত্যাদি। বীর মুক্তিযোদ্ধাদের স্মৃতি বিজড়িত বস্তুগুলো নিয়ে গড়ে তোলা হয়েছে (প্রদর্শিত হচ্ছে) মুক্তিযুদ্ধ গ্যালারি।এই মুক্তিযুদ্ধ গ্যালারির জন্য মুক্তিযোদ্ধাদের ছবি,শহীদ মুক্তিযোদ্ধাদের ব্যবহার্য জামা-কাপড়, বই-পত্র অন্যান্য সামগ্রী এবং নৌ জাদুঘরের জন্য নৌকা দান করলে জাদুঘরটি সমৃদ্ধ হবে। সকলের সমবেত প্রচেষ্টায় বিক্রমপুর জাদুঘর দেশের মধ্যে একটি উচ্চমানের সমৃদ্ধ সংগ্রহশালা হিসেবে গড়ে উঠুক এটা আমাদের একান্ত কামনা। আমরা চাই আপনিও আমাদের প্রচেষ্টার সহযাত্রী হোন – সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দিন। এই ‘বিক্রমপুর জাদুঘর’-এ প্রত্ন ও প্রাচীন সামগ্রী দান করে আপনিও হতে পারেন জাদুঘর গড়ে তোলার গর্বিত অংশীদার। তিনি আরো বলেন যে, ‘আমরা প্রতিটি বস্তুর প্রাপ্তির পাকা রশিদ বা দানপত্রের কাগজ দিয়ে থাকি এবং প্রদর্শনীতে দাতার নাম, তাহার পিতার নাম, পূর্ণ ঠিকানা এবং সংগ্রাহকের নাম ঠিকানাও থাকে। দর্শনার্থী দেখে যেন তৃপ্তি পায় আমরা তাই করি আপনার দান অক্ষয় থাকুক। তাই বলছি পুরাতন জিনিস অযত্নে অবহেলায় ফেলে না রেখে আমাদের খবর দিন আমরা গিয়ে নিয়ে আসবো বা সংগ্রহ করবো।’ তিনি তাহার মোবাইল নং উল্লেখ করে বলেন যে কোন বিষয়ে কল করার আহ্বান জানান কিউরেটর,নাছির উদ্দিন আহমেদ জুয়েল। মোবাইল নং ০১৭১১৩৬২৯১৩ এবং ইমেইল:bikrampurjadughor@gmail.com ঢাকাস্থ কার্যালয়: আলেয়া হাউস, বাড়ি# ৩৬, সড়ক# ০২, ধানমন্ডি,ঢাকা। উল্লেখ্য, মুন্সীগঞ্জ জেলার বিক্রমপুর পরগনার তথা বিক্রমপুরের রয়েছে হাজার বছরের ইতিহাস। প্রাচীন পূর্ববঙ্গ বা সমতটের রাজধানী হিসেবে বিক্রমপুরের খ্যাতি কমপক্ষে ১২০০-১৫০০ বছরের। বিক্রমপুরের মাটি খুঁড়ে পাওয়া গেছে হাজার বছর আগের নৌকা, কাঠের ভাস্কর্য, পাথরের ভাস্কর্য, টেরাকোটাসহ অসংখ্য অমূল্য প্রত্নবস্তু। এ ছাড়াও বিক্রমপুরের মাটিতে জন্মগ্রহণ করেছেন অনেক মনীষী। বিক্রমপুরের এইসব অতীত ইতিহাস, ঐতিহ্য, লোকজীবন, শিক্ষা-সংস্কৃতি ও প্রত্ন নিদর্শনাদি সংরক্ষণ করা সর্বোপরি প্রদর্শনের জন্য ‘অগ্রসর বিক্রমপুর ফাউন্ডেশন’ নামে একটি সামাজিক সংগঠন মুন্সীগঞ্জ জেলার শ্রীনগর উপজেলার রাড়িখাল ইউনিয়ন এর উত্তর বালাসুর গ্রামের জমিদার যদুনাথ রায়ের ১৯৬৫ সাল থেকে পরিত্যক্ত বাড়িতে “বিক্রমপুর জাদুঘর” (Bikrampur Museum) প্রতিষ্ঠা করে। সরকারকে বছরে প্রায় আড়াই লাখ টাকা লিজের অর্থ পরিশোধ করে (বাড়ির জমি, দিঘি, মন্দির সহ সমস্ত কিছুর জন্য) জাদুঘরটি পরিচালনা করে আসছে।
২০১০ সালের ২৯ মে জাদুঘর ভবনটির ভিত্তি প্রস্তর স্থাপন করেন স্থানীয় সরকার পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রী সৈয়দ আশরাফুল ইসলাম এম.পি। ২০১৩ সালের ২৮ মে গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ‘বিক্রমপুর জাদুঘর’-এর শুভ উদ্বোধন করেন। ২০১৪ সালের ২০ জুন সংস্কৃতি বিষয়ক মন্ত্রী আসাদুজ্জামান নূর এমপি জাদুঘরটির দ্বারোদঘাটন করেন। পাশাপাশি মাননীয় প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনার ইচ্ছে অনুযায়ী বাংলাদেশে একমাত্র “নৌকা জাদুঘর” (Boat Museum) উদ্বোধন করেন। প্রায় সাড়ে ১৩ একর জায়গা জুড়ে অগ্রসর বিক্রমপুর ফাউন্ডেশনের উদ্যোগে ও সরকারি অর্থায়নে এবং পৃষ্ঠপোষকতায় ২০১৪ সালে নির্মাণ করা হয়েছে জাদুঘর এবং গেস্ট হাউজ বা পান্থশালা। ১৯৭১ সালে মহান মুক্তিযুদ্ধে কুমিল্লার চৌদ্দগ্রামে ঐতিহাসিক বেতিয়ারায় সম্মুখে যুদ্ধে গেরিলা বাহিনীর ৯ জন তৎকালীন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়র মেধাবী শিক্ষার্থী বীর মুক্তিযোদ্ধা পাক হানাদার বাহিনীর অতর্কিত হামলায় শহীদ হন। শহীদ বীর মুক্তিযোদ্ধাদের মধ্যে তমধ্যে অত্র এলাকার কৃতি সন্তান ছাত্রনেতা নিজাম উদ্দিন আজাদ এবং সিরাজুম মুনির ছিলেন। তাঁহাদের প্রতি শ্রদ্ধা ও সম্মান নিবেদন করে ২০২২ সালে “শহীদ মুনীর-আজাদ’ পাঠাগার স্থাপন করা হয়েছে। সবমিলিয়ে এই উন্মুক্ত আঞ্চলিক জাদুঘরটি আদ্যিকালের বিক্রমপুরের ইতিহাস ও ঐতিহ্যের সংগ্রহশালা যা এককথায় একটি ছাদের নিচে পুরো বিক্রমপুর। আমরা আলোর পথযাত্রী! শ্লোগান নিয়ে আলোকিত এবং দেশহিতব্রতে উজ্জীবিত মানুষ গড়ে তোলার বহুমুখী কর্মকাণ্ডে জড়িত থেকে সামাজিক সংগঠন অগ্রসর বিক্রমপুর ফাউন্ডেশন দুই যুগ বা ২৫ বছর পার করেছে। তাদের অনেকগুলো সামাজিক ও সাংস্কৃতিক প্রতিষ্ঠানের মধ্যে এই আঞ্চলিক জাদুঘরটি অন্যতম। কিউরেটর অবৈতনিক হলেও বাকি ৬জন কর্মকর্তা কর্মচারী নিয়ে প্রতিমাসে প্রায় ৮০ থেকে ৮৫ হাজার টাকা পরিশোধ করে জাদুঘরটি ১০ বছর যাবত বিনা প্রবেশ মূল্য ছাড়া বা বিনা টিকিটে পরিচালনা করে আসছে। তবে ব্যায় সংকুলান ও জাদুঘরটি আরো সমৃদ্ধ সংগ্রহশালা হিসেবে গড়ে তোলার জন্য জানুয়ারি ২০২৪ থেকে ২০ টাকা মূল্যের এন্টি ফি বা প্রবেশ মূল্য নির্ধারণ করা হয়েছে। শত ব্যস্ততার শহরে একটু খোলামেলা জায়গায় দম ফেলার যেন ফুসরত নেই। কাজের ফাঁকে একটু ছুটি পেলেই তাই অনেকেই ছোটেন একটু বিনোদনের জন্য কিংবা ছুটির দিনে নিরিবিলি পরিবেশে ঘুরে বেড়াতে, প্রাণ খুলে নিঃশ্বাস নিতে রাজধানীর খুব কাছেই বঙ্গবন্ধু এক্সপ্রেস ওয়েতে (ঢাকা-মাওয়া হাইওয়েতে) মাত্র ৫০ মিনিটে পৌঁছে যাবেন ভাগ্যকূলের সাবেক জমিদার বাড়ি ” বিক্রমপুর জাদুঘর”। বালাসুর চৌরাস্তা থেকে ডানে ঢুকে যাবেন ড.হুমায়ুন আজাদের ভাষায় “বিলের ধারে প্যারিস শহর” সাবেক জমিদার যদুনাথ রায়ের পরিত্যক্ত বাড়িতে উন্মুক্ত বিক্রমপুর জাদুঘরে। তিনতলা ভবনের এ জাদুঘরে প্রবেশ করতেই দু’পাশে দুটি বড় মাটির পাতিল বা মটকা দেখতে পাবেন। মোট ৭টি গ্যালারিতে রাখা হয়েছে গুরুত্বপূর্ণ সব নির্দশন। নিচতলার বাম পাশের গ্যালারি ‘যদুনাথ রায়ের’ নামে। এ গ্যালারিতে বিক্রমপুরের প্রাচীন মানচিত্র, বিক্রমপুরের বিভিন্ন এলাকা থেকে পাওয়া মাটিরপাত্র, পোড়া মাটির খেলনাসহ প্রত্নতাত্ত্বিক বিভিন্ন নিদর্শন আছে। নিচতলার ডান পাশের গ্যালারিটি স্যার জগদীশ চন্দ্র বসুর নামে। এ গ্যালারিতে আছে ব্যাসাল্ট পাথরের বাটি, গামলা, পাথরের থালা, পোড়া মাটির ইট, টালি ইত্যাদি এছাড়া বিক্রমপুরের নানা প্রত্নতাত্ত্বিক স্থাপনার ছবিসহ বিভিন্ন নিদর্শন। দ্বিতীয় তলার বাম পাশের মুক্তিযুদ্ধ গ্যালারিতে আছে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের ছবি, ইতিহাস, দলিল, বই ও বিভিন্ন নমুনা। আর ডান পাশের গ্যালারিতে আছে বিক্রমপুরে জন্ম নেয়া মনীষীদের জীবন ও কর্মের বৃত্তান্ত। আরও আছে কাগজ আবিষ্কারের আগে প্রাচীন আমলে যে ভূর্জ গাছের বাকলে লেখা হতো সেই ভূর্জ গাছের বাকল। তৃতীয় তলায় এখানে পরিদর্শন করা হয়েছে বিভিন্ন সময়ের বিভিন্ন দেশ ও সাম্রাজ্যের কয়েন, নোট, পরিবারের ব্যবহারের তালিকা থেকে বিলুপ্ত হয়ে যাওয়া জিনিসপত্র আদ্যিকালে পরিবারের কাজে বিভিন্ন সময়ে ব্যবহৃত হুঁকা, হারিকেন, কুপি, কলের গান, টেলিফোন সেট, রেডিও,কলম,দোয়াত, টাইপরাইটার, ক্যামেরা, টেপ রেকর্ডার,ব্যাটারী চালিত টেলিভিশন, জাঁতা, খড়ম, পয়টা, পান বাটা, কাঁসার বাসনপত্র, মাটির জিনিসপত্র, কৃষি যন্ত্রপাতি, হাতে বুননের তাঁত শিল্পের যন্ত্রপাতি, মসলিন শাড়ি,তালপাতায় লেখা পুঁথি, পুরাতন খাট পালং, চেয়ার, টেবিল, আলমারী,কাঠের সিন্দুক, পোড়া মাটির মূর্তি, সিরামিকের থালাসহ প্রাচীন আমলে স্থানীয় মানুষদের ব্যবহার্য বিভিন্ন নিদর্শন। এবং স্বদেশী আন্দোলনের সাক্ষী সুতা কাঁটা চড়কা ইত্যাদি।
মন্তব্য