
রাজনীতি
শ্রীনগর উপজেলা আওয়ামী লীগের সম্মেলন ঘিরে চলছে নানা সমীকরণ
শ্রীনগর পোস্ট ডেস্ক
মঙ্গলবার, ১৬ মে, ২০২৩, ১০:১৫ পূর্বাহ্ণ | 682 বার পড়া হয়েছে



আরিফ হোসেনঃ শ্রীনগর উপজেলা সম্মেলন হতে বাকী আর মাত্র কয়েকদিন। আগামী ২০ মে’র সম্মেলনকে ঘিরে চলছে নানা সমীরকণ। এখনো কেউ নিশ্চিত বলতে পরাছে না কারা হচ্ছেন আগামী কমিটির সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক। সম্মেলনের তারিখ ঘোষণা হওয়ার পর থেকেই ঘূর্ণি খেয়ে বার বার অবস্থান পাল্টাচ্ছে উপজেলা আওয়ামী লীগের বাতাস। এখনো পর্যন্ত সভাপতি পদে ২ জন ও সাধারণ সম্পাদক পদে প্রতিদ্ব›দ্বীতা করার জন্য ৬ জন প্রার্থী হয়েছেন বলে জানা গেছে। তবে সাধারণ সম্পাদক পদের হেভিওয়েট প্রার্থী উপজেলা আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা আজিজুল ইসলাম তার নাম প্রত্যাহার করে নেওয়ায় এই পদের উত্তাপ অনেকটাই কমেগিয়েছিল। কিন্তু উপজেলা পরিষেদের ভাইস চেয়ারম্যান ওয়াহিদুর রহমান জিঠু এবং সর্বশেষ উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান মোঃ মসিউর রহমান মামুন এই পদে অন্যদের সাথে প্রতিদ্ব›দ্বীতার ঘোষণা দেওয়ায় তা এখন আবার জমে উঠেছে। যদিও মসিউর রহমান মামুন সভাপতি পদে প্রতিদ্বন্দ¦ীতা করবেন বলে তার অনুসারীদের অনেকেই সামাজিক যোগাযোগ মধ্যমে প্রচারণা চালিয়েছিল।
স্থানীয় রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে, সম্মেলনের সভাপতি কে হবেন এটা বড় বিষয়। বর্তমান সভাপতি ও আওয়ামী লীগ দলীয় সাবেক এমপি সুকুমার রঞ্জন ঘোষের ইচ্ছার উপর নির্ভর করছে এই পদে কে আসবেন। যদিও তিনি অসুস্থ্যতার জন্য ৬ বছর ধরে এলাকায় আসেন না। ২০১৭ সালের ২৬ মার্চ এম রহমান শপিং কমপ্লেক্সের সামনে মসিউর রহমান মামুন ও গোলাম সারোয়ার কবির গ্রæপের সাথে সুকুমার রঞ্জন ঘোষের গ্রæপের সংঘর্ষ ও গোলাগুলির ঘটনা ঘটে। এর কিছু সময় পরই সুকুমার রঞ্জন ঘোষ ঝুমুর সিনেমা হলের সামনে নেতা কর্মীদের উদ্দেশ্যে বক্তব্য দেওয়ার সময় অসুস্থ্য হয়ে পরেন। তাকে দ্রæত ঢাকা নেওয়া হয়। এর পর থেকে তিনি আর শ্রীনগর মুখী হননি। সুকুমার রঞ্জন ঘোষ বিহীন সুসংগঠিত আওয়ামী লীগ এখন ছিন্ন বিচ্ছিন্ন।
দীর্ঘদিন শ্রীনগরে না আসলেও দলীয় লবিংয়ের কারনে তিনি যদি এখনো শ্রীনগর উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি হতে চান তাহলে এই পদে তার সাথে হয়তো কেউ প্রতিদ্বন্দ¦ীতা করবেন না। সেই ক্ষেত্রে সভাপতি পদে প্রতিদ্বন্দ¦ীতার ঘোষণা দেওয়া উপজেলা আওয়ামী লীগের ত্যাগী নেতা আলহাজ¦ তোফাজ্জল হোসেন তার বর্তমান পদ সাধারণ সম্পাদকের পদেই থেকে যেতে পারেন। তাহলে পূর্বের কমিটিই বহাল থাকবে। আর সুকুমার রঞ্জন ঘোষ সভাপতি না হলে সভাপতি পদে আলহাজ¦ তোফাজ্জল হোসেন এতোদিন একমাত্র প্রার্থী থাকলেও বর্তমান কমিটির সিনিয়র সহ সভাপতি আলহাজ¦ সেলিম আহমেদ ভূইয়া গত রাতে সভাপতি পদে নিজের প্রার্থীতা ঘোষণা করেছেন ।
অপরদিকে সাধারণ সম্পাদক পদে প্রতিদ্বদ্বীতা করবেন উপজেলা আওয়ামী লীগের সহ সভাপতি আবুল কালাম আজাদ ডালু। তিনি শ্রীনগর উপজেলা ও কলেজ ছাত্রলীগ, উপজেলা যুবলীগ ও শ্রমিক লীগের সভাপতি ছিলেন। সিভি জমা নিয়ে কমিটি ঘোষণা দিলে তার পাল্লা ভাড়ি হবে বলে বিশ্লেষকদের মত।
শ্রীনগর উপজেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ন সম্পাদক শেখ মোঃ আলমগীর এই পদের জন্য প্রতিদ্ব›দ্বীতা করতে পারেন। শ্রীনগর উপজেলা আওয়ামী লীগে ত্যাগী ও স্পটবাদী নেতাদের যদি তালিকা করা হয় তাহলে তার নাম থাকবে এক বা দুই নম্বরে। জননেত্রী শেখ হাসিনার ঘোষণা অনুুযায়ী ত্যাগিদের মূল্যয়নের প্রশ্ন অগ্রভাগে রাখা হলে এই পদের জন্য শেখ মোঃ আলমগীর শক্ত প্রার্থী বলে অনেকেই মনে করেন।
এই পদে প্রার্থী হয়েছেন ভাগ্যকুল ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মনির হোসেন মিটুল। তিনি সুকুমার রঞ্জন ঘোষের প্রথম সংসদ নির্বাচনে বিএনপির ঘাটি হিসাবে পরিচিত ওই ইউনিয়নে শক্ত ভাবে নেতৃত্ব দিয়ে আওয়ামী লীগকে এগিয়ে নেন। কিন্তু পরবর্তীতে তার বিরুদ্ধে নানা অভিযোগ উঠার কারনে বিতর্কিত হন।
সাধারণ সম্পাদক পদে প্রার্থীতার ঘোষণা দিয়েছেন উপজেলা আওয়ামী লীগের সদস্য মিনহাজ উদ্দিন। তিনি গত ২ বছর ধরে স্থানীয় রাজনীতিতে বেশ সময় দিচ্ছেন।
এই পদে নিজের প্রার্থীতা ঘোষণা করেছেন শ্রীনগর উপজেলা পরিষদের ভাইস চেয়ারম্যান ওয়াহিদুর রহমান জিঠু। তিনি শ্রীনগর কলেজ ও উপজেলা ছাত্রলীগের সভাপতি ছিলেন। ছাত্রলীগ করার কারণে জিঠু বিএনপি আমলে মামলা হামলার শিকার হন। উপজেলা সেচ্ছাসেবক লীগের সাধারণ সম্পাদক পদেও দায়িত্ব পালন করেন। গত উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে সর্বোচ্চ ভোট পেয়ে ভাইস চেয়ারম্যান নির্বাচিত হন। তরুণ এই নেতা সাংগঠনিক ভাবে তার দক্ষতার পরিচয় রেখে চলেছেন।
শ্রীনগর উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান মোঃ মসিউর রহমান মামুনের প্রথমে সভাপতি পদে প্রতিদ্বদ্বীতার আভাস দিলেও গত ১৪ মে সাধারণ সম্পাদক পদে প্রতিদ্বন্দ্বীতার ঘোষণা দেন।
গত নির্বাচনে মসিউর রহমান মামুন আওয়ামী লীগের প্রার্থী আলহাজ¦ তোফাজ্জল হোসেনের বিরুদ্ধে বিদ্রোহী প্রার্থী হিসাবে নির্বাচন করে জয়ী হন। সংগঠনের স্বার্থ পরিপন্থী কার্যক্রম ও সংগঠনিক শৃঙ্খলা ভঙ্গের অভিযোগে মসিউর রহমান মামুনকে দল থেকে বহিস্কার করা হয়। এছাড়া বিভিন্ন সময় আওয়ামী লীগ ও সহযোগী সংগঠন থেকে অব্যাহতি পাওয়া নেতাদের কাছে মসিউর রহমান মামুনের এম রহমান শপিং কমপ্লেক্স হয়ে উঠে আশ্রয় স্থল।
সম্প্রতি মসিউর রহমান মামুন আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী সংসদের নিকট ক্ষমা প্রার্থনা করলে আওয়ামী লীগের জাতীয় কমিটির সভায় সিদ্ধান্ত অনুযায়ী সংগঠনের স্বার্থ পরিপন্থী কর্মকান্ড ও শৃঙ্খলা ভঙ্গ না করার শর্তে তাকে ক্ষমা প্রদান করা হয়।
মসিউর রহমান মামুন নৌকার বিপক্ষে নির্বাচন করে বিজয়ী হন। তার সাথে নির্বাচন করে দল থেকে বহিস্কৃত নেতাদের মধ্যে যারা ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে নৌকার প্রতিপক্ষ হয়ে নির্বাচন করেছেন সংগত কারনে তিনি তাদের সমর্থন দেন। ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে ১৪টি ইউনিয়নের মধ্যে ৯টিতে নৌকার ভরাডুবি হয়। তারপরও নিজের ব্যক্তি ইমেজের সচ্ছতার কারনে অনেক নেতা কর্মী তাকে পছন্দ করেন।
এই ক্ষেত্রে তার অনুসারীদের দাবী, উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান হিসাবে তিনি আওয়ামী লীগের বিভিন্ন অনুষ্ঠানে উপস্থিত হয়েছেন। কিন্তু তাকে স্টেজে না ডেকে নেতারা নিগৃহিত করেছেন। অনেক সময় তিনি স্টেজের সামনে বসে থেকে ফেরত এসেছেন। এখন সময় এসেছে এই বিষয়গুলো সমাধান করার।
অপর একটি সূত্র জানায়, শ্রীনগরে আওয়ামী লীগের রাজনীতি নিয়ন্ত্রন করেন জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি মো মহিউদ্দিন। বিদ্রোহী গ্রæপের নিয়ন্ত্রন মুন্সীগঞ্জ ৩ আসনের এমপি মৃণাল কান্তি দাসের হাতে। সভাপতি – সম্পাদক পদ তাদের দুজনের মধ্যে ভাগাভাগি হলেও অবাক হওয়ার কিছু থাকবেনা।
দেশে আওয়ামী লীগ দলীয় সরকার। শ্রীনগরে শরীক দলের এমপি। আওয়ামী লীগ নেতাদের সাথে এমপি মাহী বি চৌধুরীর বিমাতা সুলভ আচরণ ও বহিস্কৃতদের সাথে তার সখ্যতার কারনে ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি – সাধারণ সম্পাদকরা নিজেদের অস্তিত্ব রক্ষার জন্য গঠনতন্ত্রের বাইরে গিয়ে ইউনিয়ন আওয়ামী লীগ ফোরাম গঠন করেন। ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের ফোরামের দায়িত্বশীল একাধিক নেতা জানান,আওয়ামী লীগের নেতারা সারা দেশে যে স্রোতে চলছেন। আমাদের এখানে সেই চিত্র নেই। আমরা সরকারে থেকেও যেন নেই। সরকারের সুযোগ সুবিধা প্রদানের ক্ষেত্রে কখনো আমাদেরকে সম্পৃক্ত করা হয়না। এই কারনে আমাদের সাথে আওয়ামী লীগের কর্মীরা যারা রাজনীতি করে তারা বঞ্চিত। উপজেলা প্রশাসন,থানা সহ কোন স্থানেই আমাদের মূল্য নেই। নিজ ভূমে পরবাসীর মতো করে আমরা তৃণমূলে নেতৃত্ব দিয়ে যাচ্ছি। সম্মেলনে সময় এসেছে আমাদের এই বঞ্চনার জবাব দেওয়ার।




রাজনীতি থেকে আরও পড়ুন



রাজনীতি সর্বাধিক পঠিত

মন্তব্য