লাইফস্টাইল
শ্রীনগরে সরকারের ডিজিটালাইজেশনের সুবিধা পাচ্ছেন ৭৩৭ জন পেনশন ভোগী
শ্রীনগর পোস্ট ডেস্ক
মঙ্গলবার, ২৫ জুলাই, ২০২৩, ১০:২৬ পূর্বাহ্ণ | 201 বার পড়া হয়েছে
আরিফ হোসেনঃ অবসরপ্রাপ্ত সরকারী কর্মকর্তা আব্দুল খালেক(৭২)।বয়সের ভারে ন্যুব্জ। প্রায় ১০ বছর আগে চাকরি থেকে অবসরে গেছেন। চাকুরী শেষে কিছু টাকা রেখে পেনশনের প্রায় সব টাকা তুলে নিয়েছিলেন। সংসারের চাহিদা পুরণে নগদ টাকা কিভাবে শেষ হয়ে গেছে তার হিসাব মিলাতে পারছেন না। সন্তানদের বিয়ে দিয়েছেন। ৫ বছর আগে গত হয়েছেন স্ত্রী। প্রতিমাসে যে পেনশনের টাকা পান তা দিয়েই চলে সংসার। তিনি জানান, এই পেনশনের টাকা তুলতে কি যে ঝামেলা হতো তা বলে বুঝানো যাবে না। প্রতিমাসে প্রথম সপ্তাহে উপজেলার তিন তলায় হিসাব রক্ষন অফিসে পেনশন বই জমা করতে হতো। বয়স্ক মানুষ হিসাবে তিন তলায় উঠা ছিল খুবই কষ্টের বিষয়। তারপর সোনালি ব্যাংকে গিয়ে শুরু হতো অপেক্ষার পালা। কখন উপজেলা হিসাবরক্ষন অফিস থেকে পেনশন বই আসবে, কখন টাকা পাবেন। ব্যাংকে উপজেলার সকল পেনশন ভোগীদের চাপেও সিরিয়ালে টাকা তুলতে কখনো কখনো সন্ধ্যা হয়ে যেত। ব্যাংকের ফ্লোরে দীর্ঘ সময় বসে থেকে যখন মনে হতো তিনিও সরকারী কর্মকর্তা হিসাবে চেয়ারে বসতেন তখন খুবই খারাপ লাগতো।
আব্দুল খালেক বলেন, এখন দিন পাল্টেছে। কোন বই জমা দেওয়ার ঝামেলা নাই, ব্যাংকে গিয়ে বসে থাকার ঝামেলা নাই। মাসের প্রথম সপ্তাহেই মোবাইল ফোনে বাংলাদেশ ব্যংক থেকে মেসেজ আসে আমার একাউন্টে পেনশনের টাকা জমা হচ্ছে। দুই একদিন পর আমার একাউন্ট থেকে মেসেজ আসে টাকা জমা হয়েছে। নতিকে চেক লিখে দিলেই সে টাকা তুলে আনে। এতো সহজে পেনশন পাওয়া যাবে তা কখনো চিন্তাও করিনি।
মোঃ ফারুক হোসেন( ২৬)। তার বাবার রেখে যাওয়া পেনশন এখন তার মা আসমা বেগম(৭৫) পান। মায়ের বয়স হয়েছে। তাই হাটা চলা করতে পারেন না। মা যে অসুস্থ্য এবং জীবিত আছেন এই মর্মে ইউনিয়ন পরিষদ থেকে প্রত্যয়নপত্র নিয়ে উপজেলা হিসাবরক্ষন কর্মকর্তার কার্যালয়ে জমা দিয়ে মায়ের পেনশন আনতে হতো। এখন আর এগুলো করতে হয়না। গুগল প্লে স্টোর থেকে লাইফ ভেরিফিকেশন এপ ইনস্টল করে সুনির্দিষ্ট তথ্য ও মায়ের মুখমন্ডলের লাইভ ছবি দিয়ে ঘরে বসেই ফেরিফিকেশন করে দিলে একাউন্টে পেনশনের টাকা জমা হয়ে যায়।
আব্দুল খালেক ও আসমা বেগমের মতো সরকারের ডিজিটালাইজেশনের এই সুবিধা পাচ্ছেন শ্রীনগর উপজেলার ৭৩৭ জন পেনশন ভোগী নারী ও পুরুষ। তাদের বেশীর ভাগই বয়সের ভারে বার্ধ্যক্যে উপনীত হয়েছেন। কয়েকদিন আগে একটি বেসরকারী ব্যংক থেকে নিজেদের পেনশন তুলতে আসা বেশ কয়েকজনের সাথে কথা হয়। তারা বলেন, এই পদ্ধতির আগে উপজেলা হিসাবরক্ষণ অফিস ও ব্যাংকে উপস্থিত হয়ে পেনশনের টাকা সংগ্রহ করা ছিল তাদের জন্য খুবই কষ্টসাধ্য বিষয়। এখন পেনশনের অর্থ যার যার ব্যক্তিগত একাউন্টে জমা হয়ে যায়। সরকারের এমন উদ্যোগের কারণে আমরা সুষ্ঠ ব্যবস্থাপনায় খুবই সহজে পেনশনের অর্থ পাচ্ছি।
শ্রীনগর উপজেলা হিসাব রক্ষন কর্মকর্তা মোঃ আসাদুজ্জামান বলেন, সরকার পেনশন ভোগীদের জন্য আলাদা সিএএফও পেনশন ও ফান্ড ম্যানেজমেন্ট আলাদা শাখা গঠন করা হয়েছে। গত মে মাস পর্যন্ত শ্রীনগর উপজেলার পেনশন ভোগীদের মধ্যে কেন্দ্রীয় ভাবে ৬০৮ ও উপজেলা হিসাবরক্ষন অফিস থেকে ১২৯ জন এই সুবিধা পাচ্ছে।
শ্রীনগর উপজেলা নির্বাহী অফিসার মোহাম্মদ হোসেন পাটওয়ারী বলেন, পেনশনভোগীদের দুর্ভোগ লাঘভের জন্য মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশনায় যে ব্যবস্থা চালু হয়েছে তা খুবই সময় উপযোগী। শ্রীনগর উপজেলার পেনশনের উপকার ভোগীরা এর সুফল ভোগ করছেন।
মন্তব্য