আরিফ হোসেনঃ মুন্সীগঞ্জ-১ আসনে হতে পারে মাহী-মহিউদ্দিন-কবিরের ত্রিমুখী লড়াই হবে বলে মনে করছেন ভোটাররা। গত ২দিনে আপিল আবেদনে বিকল্পধারার মাহী বি.চৌধুরী ও স্বতন্ত্র প্রার্থী গোলাম সারোয়ার কবিরের মনোনয়ন টিকে যাওয়ার পর থেকে বিভিন্ন স্থানে এমন গুঞ্জন শুনা যাচ্ছে। এই আসনে বিকল্পধারার মাহী বি.চৌধুরী গত নির্বাচনে আওয়ামী লীগের কাধে ভর করে এমপি নির্বাচিত হন। এবার তিনি বিকল্পধারার কুলা প্রতিকে নির্বাচন করছেন। নৌকার প্রার্থী হয়েছেন সিরাজদিখান উপজেলা পরিষদের একাধিকবার নির্বাচিত সাবেক চেয়ারম্যান মোঃ মহিউদ্দিন আহমেদ। অপরদিকে স্বতন্ত্র প্রার্থী হয়েছেন ঢাকা মহানগর দক্ষিন আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক গোলাম সারোয়ার কবির। কিন্তু গত ৩ ডিসেম্বর মনোনয়ন বাছাইয়ে মুন্সীগঞ্জ জেলা রির্টানিং অফিসার মাহী বি.চৌধুরী ও গোলাম সারোয়ার কবিরের মনোনয়নপত্র বাতিল ঘোষণা করেন। এসময় ভোটারদের সামনে চলে আসে এই আসন থেকে প্রতিদ্বন্দ্বীতাকারী তৃণমূল বিএনপির চেয়ারপার্সন অন্তরা সেলিমা হুদার নাম। কিন্তু দোহারের বাসিন্দা অন্তরার পদচারণা না থাকায় ভোটারদের এই ধারনা কয়েকদিনের ভেতরেই মিলিয়ে যেতে থাকে। এর মধ্যে গত ২ দিনে মাহী বি.চৌধুরী ও গোলাম সারোয়ার কবিরের আপিল আবেদন মঞ্জুর হয়। ভোটাররা ধারণা করছেন মাঠে এই ৩ জনের মধ্যেই ত্রিমুখী লড়াই জমে উঠবে।
মুন্সীগঞ্জ-১ আসনে(শ্রীনগর-সিরাজদিখান)মোট ভোটার সংখ্যা ৫ লাখ ৬ হাজার ৯শ ১৫ জন। পুরুষ ভোটার ২ লাভ ৫৯ হাজার ৭শ ১২ জন। নারী ভোটার ২ লাখ ৪৭ হাজার ২০৩ জন। এই ভোটাররাই তাদের আগামী দিনের নেতা নির্বাচন করবেন বলে নির্বাচন সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে।
মাহী বি.চৌধুরী,মোঃ মহিউদ্দিন আহমেদ ও গোলাম সারোয়ার কবিরের মধ্যে ত্রিমুখী লড়াই হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।
মুন্সীগঞ্জ-১ আসনে শ্রীনগর উপজেলার মজিদপুর দয়হাটা গ্রামের চৌধুরী পরিবারের রয়েছে রাজনৈতিক ঐতিহ্য। মাহী বি.চৌধুরী আসনটির সর্বশেষ এমপি। তিনি বিকল্পধারার যুগ্ন মহাসচিব। তার দাদা কফিল উদ্দিন চৌধুরী এই আসনের এমপি ছিলেন,বাবা বি.চৌধুরীও এই আসন থেকে বিএনপির ব্যানারে একাধিকবার এমপি নির্বাচিত হয়েছেন। সর্বশেষ রাষ্ট্রপতি নির্বাচিত হন। কিন্তু বিএনপির সাথে বনিবনা না হওয়ায় নিজে বিকল্পধারা দলটি প্রতিষ্ঠা করেন। এই আসনে বিকল্পধারা থেকে ২০০৪ সালে মাহী বি.চৌধুরী এমপি হন। গত নির্বাচনে আওয়ামী লীগের সাথে জোট করে তিনি তৃতীয়বারের মতো এমপি নির্বাচিত হয়েছেন। বিকল্পধারা মনে করে,মুন্সীগঞ্জ-১ আসনের মানুষ শান্তি প্রিয়। তারা শান্তির রাজনীতিতে বিশ্বাস করে কুলা প্রতিকে ভোট দিবেন। বিকল্পধারার সমর্থকরা দাবী করেন,তারা কোন রকম হিংসার রাজনীতি করেন। শ্রীনগর-সিরাজদিখানের উন্নয়নের পাশাপাশি মানুষ শান্তিতে ঘুমাতে পেরেছে।
আওয়ামী লীগের মনোনীত প্রার্থী তৃণমূল থেকে উঠে আসা সিরাজদিখান উপজেলা পরিষদের একাধিকবার নির্বাচিত সাবেক চেয়ারম্যান ও উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি মোঃ মহিউদ্দিন আহমেদ। তিনি মালখানগর ইউনিয়ন পরিষদের একাধিকবার চেয়ারম্যান ছিলেন। সেখানে বর্তমানে তার স্ত্রী এই দায়িত্বে রয়েছেন। মুন্সীগঞ্জ-১ আসনে বরাবর শ্রীনগর থেকেই এমপি নির্বাচিত হন। এর আগে শ্রীনগর উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি সুকুমার রঞ্জন ঘোষ এমপি ছিলেন। মহিউদ্দিন আহমেদ এবার মনোনয়ন পাওয়ায় সিরাজদিখান থেকে এক চেটিয়া ভোট পাবেন বলে তার সমর্থকরা আশা করছেন। মহিউদ্দিন আহমেদ একাধিক গন সংযোগে বলেছেন,প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তাকে নৌকা দিয়েছেন। শ্রীনগর-সিরাজদিখানের আওয়ামী লীগ নেত্রীর ইচ্ছার বিরুদ্ধে যেতে পারেনা বলে প্রত্যয় ব্যক্ত করেন।
অপরদিকে সুকুমার রঞ্জন ঘোষ পরবর্তী সময় থেকে ঢাকা মহানগর দক্ষিন আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক গোলাম সারোয়ার কবির মাঠে রয়েছেন। শ্রীনগর-সিরাজদিখানের প্রত্যন্ত অঞ্চল সহ প্রায় সব জায়গায় সময় নিয়ে প্রচারনা করেছেন। প্রায় ১ দশকের এই প্রচারণা তাকে ভোটারদের কাছে পরিচিত করেছে। কবির সমর্থকদের দাবী, গোলাম সারোয়ার কবির হঠাৎ মাঠে আসেনি। অনেকদিন ধরে মাঠে থাকায় তিনি অনেকটাই গুছিয়ে নিয়েছেন। ভোটাররা এবার আর কোন ভুল করবে না।
সারা দেশের মতো মুন্সীগঞ্জ-১ আসনের ভোটারাও তাকিয়ে আছে আসলে জোট হবে কিনা এর দিকে। আওয়ামী লীগের সাথে বিকল্পধারার জোট হলে নির্বাচনী চিত্র হবে এক আর জোট না হলে হবে আরেক। তবে স্বতন্ত্র প্রার্থী থাকায় জোটের রাজনীতি হোক বা ভোটের দুই ক্ষেত্রেই মুন্সীগঞ্জ-১ আসনের রাজনীতি এখন জমজমাট ।