আরিফ হোসেনঃ শ্রীনগরে রাজমিস্ত্রিকে হ্যান্ডপরিয়ে অপহরনের ঘটনায় গ্রেপ্তার হওয়া ৪ জনের মধ্যে ৩ জন আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দী প্রদান করেছে। এই ঘটনার মূলহোতা ট্রাফিক পুলিশের কনস্টেবলের ৩ দিনের রিমান্ড আবেদন মঞ্জুর করেছেন আদালত।
মামলাটির তদন্তকারী কর্মকর্তা শ্রীনগর থানার এসআই অঙ্কুর ভট্টাচার্য জানান, গ্রেপ্তার কৃতদেরকে আদালতে তোলা হলে বিজ্ঞ বিচারকের সামনে ফয়সাল,আরিফ ও শাফিন ১৬৪ ধারায় দোষ স্বীকার করে জবানবন্দী প্রদান করে। মামলার প্রধান আসামী ট্রাফিক পুলিশের কনস্টেবল লিয়াকত হোসেন লিমনের বিরুদ্ধে ৭ দিনের রিমান্ড আবেদন করলে আদালত ৩ দিনের রিমান্ড আবেদন মঞ্জুর করেন।
বৃহস্পতিবার রাত ৮টার দিকে উপজেলার ফুলকুচি এলাকা থেকে মোঃ সুজন(২০)কে পুলিশ পরিচয়ে ৬ যুবক মিলে তুলে নেয়। ৪ ঘন্টা পর পুলিশ অপহৃত রাজমিস্ত্রি সুজনকে উদ্ধার করে। এই ঘটনায় মুন্সীগঞ্জ ট্রাফিক পুলিশের কনস্টেবল লিয়াকত হোসেন লিমন সহ উপজেলার উত্তর কামারগাও গ্রামের ফয়সাল খান,দামলা গ্রামের আরিফ হোসেন ও শাফিনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। আপর দিকে মান্দ্রা গ্রামের আরিফ মির্জা ও অজ্ঞাত এক আসামী গ্রেপ্তার পলাতক রয়েছে।
এই ঘটনায় গ্রেপ্তারকৃতদের ছবি সহ সংবাদ প্রকাশ হওয়ার পর অনেকেই এই চক্রটির বিভিন্ন অপরাধের তথ্য দিতে থাকেন। একাধিক সূত্র জানায় চক্রটি অনেকদিন ধরে বিভিন্ন স্থানে অবস্থান নিয়ে মোটরসাইকেল চালকদেরকে মামলার ভয় দেখিয়ে টাকা পয়সা হাতিয়ে নেয়। এর মূল হোতা ফয়সাল। সে লিয়াকতের সোর্স হিসাবে কাজ করতো। অপরদিকে আরিফ হোসেন নিজের ফেসবুক প্রোফাইলে নিজের নাম আবির হোসেন আরিফ হিসাবে লিখে সেখানে নিজেকে কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের সাবেক উপ মুক্তিযুদ্ধ ও গবেষণা সম্পাদক পদের পরিচয় দিয়ে রেখেছে। নিউজ প্রকাশের পর সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে মদের বোতল সহ তার ছবি প্রকাশ করেছে। একজন লিখেছে ৩ জনই ছাত্রলীগের নেতা। লিয়াকতের সাথে সখ্যতা তৈরি করে তারা অহরহ ছিনতাই,অপহরনের মতো কাজ করে আসছিল।
পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানাগেছে, রাজমিস্ত্রি সুজন ওই এলাকার হৃদয় মার্কেটের সামনে কোমলপানীয় পান করার সময় দুইটি মোটরসাইকেলে করে ৬ যুবক এসে তার কাছে মাদক আছে বলে হ্যান্ডকাপ পরিয়ে নিয়ে যায়। পরে তাকে রাঢ়ীখাল এলাকার নির্জন স্থানে এবং বঙ্গবন্ধু এক্সপ্রেসওয়ের ছনবাড়ি ফ্লাইওভারের নীচে এনে বাড়ি থেকে মুক্তিপন এনে দিতে বলে। এসময় সুজন জানায়, ষোল দিন আগে তার বাবা মারা গেছেন এবং মা পিঠা বিক্রি করে সংসার চালান। এমন অবস্থায় সে টাকা দিতে অপারগতা প্রকাশ করে। এতে অপহরণকারীরা ক্ষিপ্ত হয়ে সুজনকে বেদম প্রহার করে। রাত ৯ টার দিকে অপহরনকারীরা সুজনের মায়ের কাছে ফোন দিয়ে ত্রিশ হাজার টাকা মুক্তিপন দাবী করে। সুজনের মা আনোয়ারা বেগম তাৎক্ষনিক ভাবে স্থানীয়দের পরামর্শে বিষয়টি শ্রীনগর থানা পুলিশকে অবহিত করেন। পুলিশের পরামর্শে আনোয়ারা বেগম টাকা নেওয়ার জন্য অপহরণকারীদেরকে সমষপুর এলাকায় তাদের বাড়ির সামনে আসতে বলেন। বেশ কয়েকবার তালবাহানা করে রাত সাড়ে ১১ টার দিকে একটি এ্যাপাচি মোটরসাইকেল (ঢাকা মেট্রোল ল ৪০-১৩৫৭) নিয়ে টাকা নিতে পাশ^বর্তী ব্রাক্ষ¥নপাইকসা মসজিদের সামনে আসলে পূর্ব থেকে ওৎ পেতে থাকা শ্রীনগর থানা পুলিশ শ্রীনগর উপজেলার উত্তর কামারগাও গ্রামের আক্তার খানের ছেলে ফয়সাল খান(২৩),দামলা গ্রামের শেখ খলিলের ছেলে আরিফ হোসেন(২০),মাহি শেখের ছেলে মুজিবুর রহমান শাফিনকে আটক করে। পুলিশ তাদেরকে সাথে নিয়ে রাত সাড়ে ১২ টার দিকে ছনবাড়ি এলাকায় আসলে লিয়াকত হোসেন লিমন ও আরিফ মির্জা সহ অজ্ঞাত আরো একজন পুলিশের উপস্থিতি টের পেয়ে সুজনের হাত থেকে হ্যান্ডকাপ খুলে নিয়ে পালিয়ে যায়। এর পরপরই শ্রীনগর থানা পুলিশ রাতভর অভিযান নামে। একপর্যায়ে দোহার ও শ্রীনগর থানা পুলিশ দোহার উপজেলার নিকরা গ্রামের নজরুল ইসলামের বাড়িতে অভিযান চালায়। এসময় নজরুল ইসলামের বিল্ডিংয়ের একটি কক্ষ থেকে লিয়াকত হোসেন লিমনকে(২৫) গ্রেপ্তার করা হয়। এসময় তার কাছ থেকে একটি বিপি লেখা হ্যান্ড কাপ, স্প্রিংয়ের লাঠি ও অপহরনের কাজে ব্যবহৃত ইয়ামাহা এফজেড মোটরসাইকেল(ঢাকা মেট্রো ল ২৪-৯৯০৩) মোটরসাইকেল উদ্ধার করা হয়।
গ্রেপ্তারকৃতরা জানায়, লিমনের নেতৃত্বে তারা শ্রীনগর উপজেলা ও আশপাশের এলাকায় পুলিশের বিভিন্ন সরঞ্জাম ব্যবহার করে জনসাধারণকে অটক ও অপহরণ করে মুক্তিপন আদায় করে আসছিল। পলাতক আরিফ মির্জা উপজেলার ভাগ্যকুল মান্দ্র গ্রামের দুলাল সর্দারের পুত্র।