আরিফ হোসেনঃ মুন্সীগঞ্জ-১ আসনে জমে উঠেছে মাহী-মহিউদ্দিন-কবিরের ত্রিমুখী লড়াই।নির্বাচনের একদিন আগে এসে ত্রিমুখী লড়াই স্পষ্ট হয়ে উঠেছে। মুন্সীগঞ্জ-১ আসনে ৯ জন প্রার্থী প্রতিদ্ব›দ্বীতা করলেও ভোটাররা ধারণা করছেন বিকল্পধারার মাহী বি.চৌধুরী,আওয়ামী লীগের মহিউদ্দিন আহমেদ ও স্বতন্ত্রপ্রার্থী গোলাম সারোয়ার কবিরের মধ্যে ত্রিমুখী লড়াই হবে হাড্ডাহাড্ডি। তবে এই লড়াই নির্ভর করছে ভোট কেন্দ্রে ভোটরদের উপস্থিতি,সংখ্যা লঘু সম্প্রদায়ের ভোট,নির্বাচনে না আসা বিএনপির তৃণমূলের ভোট সহ নতুন ভোটারদের উপর। এর যে কোন এক দুইটি কারণ প্রতিদ্বদ্বীদের ভাগ্য নির্ধারণ করতে পারে।
দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগেই বিএনপি সহ সমমনা দলগুলো নির্বাচনে না আসায় আওয়ামী লীগের সরকার গঠন নিশ্চিত হয়ে গেছে। একারণে ভোটারদের মধ্যে বিগত সংসদ নির্বাচনগুলোর মতো তেমন উৎসাহ উদ্দিপনা নেই। কিন্তু কে এমপি হলে স্থানীয় ভাবে কে লাভবান হবেন এই প্রশ্নে স্থানীয় আওয়ামী লীগের নেতারা কয়েক ভাগে ভাগ হয়ে তোড়জোর চালিয়ে যাচ্ছেন।ভোটারদের উপস্থিতি নিশ্চিত করার বিষয়েও তাদের প্রতিযোগীতা পরিলক্ষিত হচ্ছে।
মুন্সীগঞ্জ-১ আসনে(শ্রীনগর-সিরাজদিখান)মোট ভোটার সংখ্যা ৫ লাখ ৬ হাজার ৯শ ১৫ জন। পুরুষ ভোটার ২ লাভ ৫৯ হাজার ৭শ ১২ জন। নারী ভোটার ২ লাখ ৪৭ হাজার ২০৩ জন। এই ভোটাররাই তাদের আগামী দিনের নেতা নির্বাচন করবেন বলে নির্বাচন সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে।
মুন্সীগঞ্জ-১ আসনে শ্রীনগর উপজেলার মজিদপুর দয়হাটা গ্রামের চৌধুরী পরিবারের রয়েছে রাজনৈতিক ঐতিহ্য। মাহী বি.চৌধুরী আসনটির সর্বশেষ এমপি। তিনি বিকল্পধারার যুগ্ন মহাসচিব। তার দাদা কফিল উদ্দিন চৌধুরী এই আসনে ২ বার এমপি ছিলেন,বাবা বি.চৌধুরীও এই আসন থেকে বিএনপির ব্যানারে একাধিকবার এমপি নির্বাচিত হয়েছেন। সর্বশেষ রাষ্ট্রপতি নির্বাচিত হন। কিন্তু বিএনপির সাথে বনিবনা না হওয়ায় নিজে বিকল্পধারা দলটি প্রতিষ্ঠা করেন। এই আসনে বিকল্পধারা থেকে ২০০৪ সালে মাহী বি.চৌধুরী এমপি হন। গত নির্বাচনে আওয়ামী লীগের সাথে জোট করে এমপি হন। বিকল্পধারার দাবী,মুন্সীগঞ্জ-১ আসনের মানুষ শান্তি প্রিয়। গত ৫ বছর সহ তাদের পরিবার মুন্সীগঞ্জ-১ আসনে হয়রাণির রাজনীতি করেনি বলেই ভোটাররা শান্তির কথা চিন্তা করে শেষ পর্যন্ত ভোট দিবে। নারী ভোট,সংখ্যা লঘুদের ভোট সহ বিএনপির ভোটে তারা এগিয়ে থাকবেন বলে বিকল্পধারা মনে করছে।
আওয়ামী লীগের মনোনীত প্রার্থী তৃণমূল থেকে উঠে আসা সিরাজদিখান উপজেলা পরিষদের একাধিকবার নির্বাচিত সাবেক চেয়ারম্যান ও উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি মোঃ মহিউদ্দিন আহমেদ। তিনি মালখানগর ইউনিয়ন পরিষদের একাধিকবার চেয়ারম্যান ছিলেন।সেখানে বর্তমানে তার স্ত্রী এই দায়িত্বে রয়েছেন। মুন্সীগঞ্জ-১ আসনে বরাবর শ্রীনগর থেকেই এমপি নির্বাচিত হন। এর আগে শ্রীনগর উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি সুকুমার রঞ্জন ঘোষ এমপি ছিলেন। এবার সিরাজদিখান আওয়ামী লীগের সভাপতি মোঃ মহিউদ্দিন আহমেদ মনোনয়ন পাওয়ায় সিরাজদিখান থেকে একচেটিয়া ভোট পাবেন বলে তার সমর্থকরা আশা করছেন। আওয়ামী লীগ একটি বড় দল। এই দলের ভোট ব্যাংক রয়েছে। তাছাড়া প্রকৃত অর্থেই যারা আওয়ামী লীগের আদর্শে বিশ^াস করেন তাদের কাছে নৌকা প্রতিক একটি বিষয়। একারণে আওয়ামী লীগের ভোটের সাথে স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের সম্পৃক্ততা তাদের জয়কে তরান্বিত করবে বলে মহিউদ্দিনের নেতা কর্মীরা বিশ্বাস করছেন।
অপরদিকে সুকুমার রঞ্জন ঘোষ পরবর্তী সময় থেকে ঢাকা মহানগর দক্ষিন আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক গোলাম সারোয়ার কবির শ্রীনগর-সিরাজদিখান চষে বেরিয়েছেন।শ্রীনগর-সিরাজদিখানের প্রত্যন্ত অঞ্চল সহ প্রায় সব জায়গায় সময় নিয়ে প্রচারনা করেছেন। প্রায় ১ দশকের এই প্রচারণা তাকে ভোটারদের কাছে পরিচিত করেছে। কবির সমর্থকদের দাবী, গোলাম সারোয়ার কবির হঠাৎ মাঠে আসেননি।অনেকদিন ধরে মাঠে থাকায় তিনি অনেকটাই গুছিয়ে নিয়েছেন।আওয়ামী লীগের একটি বড় অংশ তাদের সাথে রয়েছে। অনেক জনপ্রতিনিধিও তাকে সমর্থন দিয়েছেন। এর সাথে তার পক্ষে তরুনদের যে জোয়ার উঠেছে উন্নয়নের স্বার্থে দল মত নির্বিশেষে ভোটাররা তাকে ভোট দিয়ে নির্বাচিত করবে বলে সমর্থকরা আশা প্রকাশ করছেন।
এই আসনে অন্য প্রার্থীদের মধ্যে সোনালী আশ প্রতিকে অন্তরা সেলিমা হুদা প্রচারণায় রয়েছেন। এছাড়া অন্য ৫ জন প্রার্থীর তেমন কোন প্রচারণা চোখে পরেনি।
সবকিছু ছাপিয়ে কুলা প্রতিকের মাহী বি.চৌধুরী, নৌকা প্রতিকের মহিউদ্দিন আহমেদ নাকি ট্রাক প্রতিকের গোলাম সারোয়ার কবির এমপি হন তা নির্ভর করছে কত ভাগ ভোটার ভোট দিতে যান তার উপরে। এর মূলে রয়েছে মাহী বি.চৌধুরী আওয়ামী লীগের ব্যানারে এমপি হওয়ায় গত ৫ বছর আওয়ামী লীগের একটি অংশের সাথে তার সুসম্পর্ক রয়েছে,মহিউদিন আহমেদ পোড় খাওয়া আওয়ামী লীগার। স্বতন্ত্র প্রার্থী গোলাম সারোয়ার কবিরও আওয়ামী লীগের রাজনীতিরি সাথে সম্পৃক্ত থেকে বহুদিন ধরে মাঠে রয়েছেন। একারণে আওয়ামী লীগের ভোটই ৩ ভাগে বিভক্ত হবে বলে ধারনা স্থানীয়দের। এর সাথে যিনি আওয়ামী লীগের রাজনীতির বাইরে থেকে ভোটারদের বেশী সম্পৃক্ত করতে পারবেন তিনিই হাসবেন শেষ হাসি।